হৃদযন্ত্রের বার্ধক্য রোধে নিয়মিত ব্যায়ামের গুরুত্ব

Nerve 13 Feb 2025
হৃদযন্ত্রের বার্ধক্য রোধে নিয়মিত ব্যায়ামের গুরুত্ব

এই নিবন্ধে আমরা দেখব—কীভাবে ব্যায়াম হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা উন্নত করতে পারে, কী ধরনের ব্যায়াম সবচেয়ে কার্যকর এবং কীভাবে আপনি এটি নিজের দৈনন্দিন জীবনে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।

অনেকেই মনে করেন, বার্ধক্য একটি অপ্রতিরোধ্য প্রক্রিয়া এবং একে বদলানো সম্ভব নয়। তবে আধুনিক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত ব্যায়াম হৃদয়ের বার্ধক্যকে অনেকাংশে প্রতিরোধ করতে পারে এবং এমনকি হৃদযন্ত্রকে ২০ বছর পর্যন্ত তরুণ রাখতে পারে! এটি বিশেষত ৫০ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তিদের জন্য আশার আলো হতে পারে।

এই নিবন্ধে আমরা দেখব—কীভাবে ব্যায়াম হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা উন্নত করতে পারে, কী ধরনের ব্যায়াম সবচেয়ে কার্যকর এবং কীভাবে আপনি এটি নিজের দৈনন্দিন জীবনে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন

গবেষণার ফলাফল: হৃদয়ের বার্ধক্য প্রতিরোধ করা সম্ভব!

সম্প্রতি American Heart Association's Circulation জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, মাত্র দুই বছর নিয়মিত ব্যায়াম করলে হৃদয়ের স্থিতিস্থাপকতা (elasticity) এবং কর্মক্ষমতা ২০ বছর পর্যন্ত কম বয়সীদের মতো হয়ে যেতে পারে।

🔬 গবেষণার মূল পয়েন্ট:

✅ প্রশিক্ষিত ব্যক্তিদের হৃদযন্ত্রের পেশি আরও নমনীয় এবং শক্তিশালী হয়ে ওঠে।

✅ ম্যাক্সিমাল অক্সিজেন আপটেক (VO₂ max) বৃদ্ধি পায়, যা হৃদযন্ত্রের কার্যক্ষমতা উন্নত করে।

✅ হৃদপিণ্ডের স্টিফনেস (stiffness) কমে যায়, ফলে রক্ত প্রবাহ আরও স্বাভাবিক হয়।

✅ উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়।

একই ধরনের আরেকটি গবেষণা UT Southwestern Medical Center থেকে পরিচালিত হয়েছিল, যেখানে দেখা গেছে নিয়মিত এবং পর্যাপ্ত ব্যায়াম হৃদপিণ্ডের বয়স কমিয়ে আনতে পারে, বিশেষ করে যদি এটি মধ্যবয়সের (৩০-৬০ বছর) মধ্যে শুরু করা হয়।

কোন ধরনের ব্যায়াম সবচেয়ে কার্যকর?
গবেষণায় দেখা গেছে যে মাত্র ৪-৫ দিন নিয়মিত ব্যায়াম করলেই উল্লেখযোগ্য উপকার পাওয়া যায়। তবে এর জন্য বিশেষ কিছু ব্যায়ামের মিশ্রণ প্রয়োজন, যা নিচে তুলে ধরা হলো—

১. অ্যারোবিক এক্সারসাইজ (Aerobic Exercise)
হৃদযন্ত্রকে শক্তিশালী করতে সবচেয়ে কার্যকরী ব্যায়াম হচ্ছে কার্ডিও বা অ্যারোবিক এক্সারসাইজ। এর মধ্যে রয়েছে:
✔ দ্রুত হাঁটা (Brisk Walking) – প্রতিদিন অন্তত ৩০-৪০ মিনিট
✔ জগিং বা দৌড়ানো (Jogging/Running)
✔ সাইকেল চালানো (Cycling)
✔ সাঁতার কাটা (Swimming)

২. রেসিস্ট্যান্স ট্রেনিং (Resistance Training) বা ভারোত্তোলন
হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্যের জন্য শুধুমাত্র কার্ডিও যথেষ্ট নয়, এর সাথে মাসল স্ট্রেংথ বাড়াতে রেসিস্ট্যান্স ট্রেনিংও করা উচিত।
✔ হালকা ওজন তোলা (Weight Lifting)
✔ প্ল্যাঙ্ক, স্কোয়াট, পুশ-আপস
✔ যোগব্যায়াম (Yoga)

৩. ইন্টারভ্যাল ট্রেনিং (HIIT - High Intensity Interval Training)
এই পদ্ধতিতে উচ্চ-গতি এবং কম-গতি ব্যায়ামের সংমিশ্রণ থাকে, যা হৃদযন্ত্রের সক্ষমতা দ্রুত উন্নত করে।
✔ ৩০ সেকেন্ড জোরে দৌড়ানো + ১ মিনিট ধীরে হাঁটা, এটি ২০-৩০ মিনিট করুন।
✔ বাইকিং বা সাঁতারের ক্ষেত্রেও এটি প্রয়োগ করা যায়।

কেন ব্যায়াম হৃদয়ের বার্ধক্য কমায়?
১. হৃদযন্ত্রের পেশির স্থিতিস্থাপকতা বাড়ায় – নিয়মিত ব্যায়ামে হৃদপিণ্ডের শক্তি বাড়ে এবং রক্ত সরবরাহের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
২. উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে – ব্যায়াম রক্তনালীগুলোর নমনীয়তা বাড়ায়, ফলে ব্লাড প্রেসার স্বাভাবিক থাকে।
৩. খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরল (HDL) বাড়ায়।
৪. ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়িয়ে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়।
৫. মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়, যা সরাসরি হৃদযন্ত্রের সুস্থতার সাথে সম্পর্কিত।


সাধারণ মানুষ কীভাবে এই অভ্যাস তৈরি করতে পারে?
✔ একবারে বেশি কঠিন ব্যায়াম শুরু করবেন না। ধীরে ধীরে মাত্রা বাড়ান।
✔ দিনের নির্দিষ্ট সময় ঠিক করুন, যাতে অভ্যাস গড়ে ওঠে।
✔ নিজেকে মোটিভেট রাখতে সঙ্গী খুঁজুন।
✔ হাঁটা বা দৌড়ানোর জন্য মিউজিক শুনুন, যা অনুপ্রেরণা বাড়ায়।
✔ জীবনের অংশ হিসেবে এটিকে নিন, শুধুমাত্র ওজন কমানোর জন্য নয়।



বয়স বাড়লেও নিয়মিত ব্যায়াম করলে হৃদযন্ত্রকে তরুণ রাখা সম্ভব! মাত্র ২ বছর নিয়মিত ব্যায়াম করলে হৃদয়ের বয়স ২০ বছর কমে যেতে পারে, যা গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে। তাই সুস্থ থাকতে এখনই ব্যায়াম শুরু করুন, আপনার হৃদয় আপনাকে ধন্যবাদ দেবে!

আপনি যদি হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তিত থাকেন, তাহলে দেরি না করে আজ থেকেই হাঁটা, দৌড়ানো বা সাইকেল চালানোর অভ্যাস করুন। সুস্থ জীবন আপনার হাতের মধ্যেই!

ডা. মোঃ গওছুল আযম
ব্রেইন,স্পাইন, নার্ভ ও স্ট্রোক সার্জন
এমবিবিএস, বিসিএস (স্বাস্থ্য), এমএস (নিউরোসার্জারি)
রেসিডেন্সি প্রোগ্রাম, বিএসএমএমইউ
ফেলোশিপ: মাইক্রোস্কোপিক এন্ড এন্ডোস্কোপিক
ব্রেইন ও স্পাইন সার্জারি (তুরস্ক, ভারত, কোরিয়া)
সহকারী অধ্যাপক, নিউরোসার্জারি বিভাগ
ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।

সিরিয়ালের জন্য অথবা ভিডিও কলে পরামর্শ পেতে কল করুন:
+8801882580286, +8801320766504 (WhatsApp, IMO) ধন্যবাদ